সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি?

আপনি কি জানেন, সাঁওতালদের উৎসব গুলি কেবলমাত্র আনন্দদায়ক অনুষ্ঠান নয় বরং প্রকৃতির সাথে এক একটি রহস্যময় জালের মত। প্রতিটি উৎসবের পিছনে রয়েছে নতুন গল্প এবং এক একটি নতুন রহস্য। কিন্তু সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি? এই বিষয় সম্পর্কে না জেনে থাকেন, তাহলে আজকের পোস্টটি আপনার জন্য।
সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি?
আজকের এই পোস্টে আমরা সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি? এবং সাঁওতালদের গ্রাম দেবতার নাম কী? এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আজকের এই পোস্টটি পড়লে আপনি জানতে পারবেন সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি?

পোস্ট সূচিপত্রঃ

সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি?

সাঁওতাল সম্প্রদায় বাংলাদেশ সহ ভারতবর্ষের ঝাড়খন্ডে এবং নেপাল প্রদেশের প্রাচীন এবং বৃহত্তম আদিবাসী সমৃদ্ধ জাতি গোষ্ঠী। বিশেষ করে তারা বাংলাদেশে উত্তরবঙ্গে রাজশাহী দিনাজপুর রংপুর জেলাতে বসবাস করে। এছাড়াও ভারতবর্ষে ঝাড়খন্ড এবং নেপাল প্রদেশে তারা বসবাস করে। সাঁওতাল আদিবাসী সম্প্রদায় মূলত তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ভাষা 

ঐতিহ্য দিয়ে পরিপূর্ণ সমৃদ্ধ একটি জাতিগোষ্ঠী। বর্তমানে সাঁওতাল সম্প্রদায় জাতি গোষ্ঠীর জীবনযাত্রা প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল এবং তাদের সমাজের মানুষের প্রধান ভিত্তি হল কৃষি কাজ করা। এছাড়াও সাঁওতাল সম্প্রদায় জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন ধরনের উৎসব রয়েছে এবং তা বিভিন্ন ভিত্তিক অনুসারে পালন করে থাকে। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি আপনারা 

যদি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই জানতে পারবেন সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি? এছাড়াও প্রতিটি উৎসবের পেছনে রয়েছে তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক মেলবন্ধন। তবে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের এইসব উৎসবগুলো জীবনের আনন্দের প্রতিটি মুহূর্তগুলোকে উজ্জ্বল করে তোলে। 

তাদের উৎসবগুলো সাধারণত প্রাকৃতিক চক্র ফসল সংগ্রহ এবং বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত এই উৎসবগুলো। তাই আজকে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনার জানতে পারবেন সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি? তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলুন আমরা বিস্তারিত অংশ নিয়ে আলোচনা করি সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি?

সহ রায়
সহরায় হল সাঁওতাল সম্প্রদায় মানুষের একটি ফসল কাটার উৎসব। বিশেষ করে এটি শীতকালে ধান কাটার শেষে উদযাপন করা হয়। তবে এই উৎসবে গরু ছাগলকে বিভিন্ন ধরনের রংবেরঙের মালা দিয়ে সাজানো হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের নৃত্য গান এবং সংগীতের মাধ্যমে এই দিনটি আনন্দ সহকারে পালন করে করা। তবে এই উৎসবের বিশেষ দিক হলো গৃহপালিত পশুদের ধন্যবাদ জানানোর জন্য পালিত একটি উৎসব।

বাহা
বাহা উৎসবকে আমরা ফুল উৎসব হিসেবে অনেকেই বলে থাকি। বিশেষ করে বসন্তকালের শুরুতে বাহা উৎসব বা ফুলের উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। তবে এই উৎসবে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীরা তাদের বিভিন্ন ধরনের দেবতাদের ফুল দিয়ে পূজা অর্চনা করার মাধ্যমে তাদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। বর্তমানে সাঁওতালদের অন্যতম বৃহৎ আনন্দমুখর এই উৎসবটি।

শিকার
শিকার উৎসবটি মূলত সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মাঝে তাদের ঐতিহ্যবাহী ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই উৎসবটি সাধারণত শীতকালীন মাসে পালন করা হয়। সাঁওতালদের জীবনধারায় শিকার উৎসবটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কারণ এই উৎসবটি তাদের প্রাচীন জীবিকা নির্বাহের প্রধান মাধ্যম গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উৎসব। শিকার উৎসবটি সাঁওতাল সম্পদের মাঝে সাহসিকতা এবং দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য নয় বরং এটি তাদের প্রকৃতির সাথে গভীরভাবে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য একটি পবিত্র রীতি। যেখানে তারা দলবদ্ধভাবে বন জঙ্গলে পশু পাখি শিকার করে এবং তাদের মাংস রান্না করে বিশেষ খাবার ের পরিবেশন করে। এছাড়াও তারা বিভিন্ন ধরনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে নাচ গান ও নৃত্যের মাধ্যমে এই উৎসবটি পালন করে।

দাশাই
দাশাই উৎসবটি মূলত দেবী দুর্গার বিজয়ের উদযাপনের প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে এটি সাধারণত বাংলা মাসের আশ্বিন মাস এবং ইংরেজি মাসের সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে দেবী দুর্গা পূজার মাধ্যমে হিন্দুদের পঞ্জিকা অনুযায়ী দাশাই উৎসবটি শুরু হয়। অর্থাৎ দাশাই উৎসবটি শারদীয় দুর্গাপূজার একটি বিশেষ সাঁওতালদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। দেবী দুর্গার সাথে সম্পর্কিত এবং সাঁওতাল সমাজের পাপ মুক্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে এই দাশাই উৎসবটি উদযাপন করে।, বর্তমানে এই উৎসবটি গ্রামীণ বাংলার সাথে সংযুক্ত। যেখানে সাঁওতালরা বিভিন্ন ধরনের নিত্য গান এবং ভোজনের মাধ্যমে দাশাই উৎসবটি আনন্দ উপভোগ করে।

সাঁওতালদের প্রধান কাজ কি?

সাঁওতাল সম্প্রদায় বাংলাদেশ সহ ভারত এবং নেপালের অন্যতম বৃহৎ জনগোষ্ঠী হিসেবে বেশ পরিচিত। বিশেষ করে তাদের জীবন যাপন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে গভীরভাবে জড়িত। যুগ যুগ ধরে সাঁওতাল সম্প্রদায় মানুষরা নিজেদের জীবন জীবিকার জন্য বিভিন্নভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল রয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে কৃষিভিত্তিক সমাজ 

গঠন করে এবং কৃষিকাজ হচ্ছে তাদের অন্যতম প্রধান পেশা। এছাড়াও শিকার মৃৎশিল্প এবং বিভিন্ন ধরনের হাতের কারু কাজের সাথে তারা জড়িত রয়েছে। যা এ সমস্ত কাজগুলো মাধ্যমে তারা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামোর মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ সাঁওতাল সম্প্রদায় মানুষরা আধুনিক যুগে প্রবেশ করলেও

এখনো তারা তাদের প্রাচীন পেশা এবং ঐতিহ্যের সংস্কৃতিগুলো অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করছে। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি আপনি যদি মনোযোগ সহ পড়ে থাকেন, তাহলে সাঁওতালদের প্রধান কাজ কি? এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন। তাই কথা না বাড়িয়ে চলুন আমরা জেনে আসি সাঁওতালদের প্রধান কাজ কি এবং তাদের পেশার বিস্তারিত তথ্য।

কৃষিকাজ
সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষের প্রধান এবং ঐতিহ্যবাহী কাজগুলোর মধ্যে কৃষিকাজ হল অন্যতম। বিশেষ করে তারা চাষবাসের সাথে নিবিড় ভাবে জড়িত। তবে তারা বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন করে থাকে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখ্য হলো যে, ধান গম ভুট্টা সরিষা আলু পিয়াজ রসুন তিল মসুর ইত্যাদি ফসল তাদের প্রধান খাদ্যশস্য। বর্ষা ঋতুতে জমিতে তারা ধান চাষ করে এবং অন্যান্য সময় অর্থাৎ শুকনো মৌসুমে তারা বিভিন্ন ধরনের শস্যের চাষ করে থাকে। কৃষিকাজের উপর তারা নির্ভরশীল হওয়ায় তারা সহজে নিজেদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে এবং উৎপাদিত ফসলগুলো বিক্রি করেও তারা অনেক অর্থ উপার্জন করতে পারে।

শিকার ও সংগ্রহ
প্রাচীন কাল থেকে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মাঝে শিকার পেশাটি ছিল তাদের প্রধান পেশা। যদিও বর্তমান সময়ে শিকার পেশা প্রচলনটি তুলনামূলকভাবে কম হলেও সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষরা তাদের বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বা পরবের সময় তারা দলবেঁধে বন জঙ্গলে শিকার করতে যায়। এছাড়াও শিকার করার মাধ্যমে বন্য প্রাণীর মাংস তাদের খাদ্য তালিকায় একটি বিশেষ রূপ। যা তারা শিকারের মাধ্যমে এগুলো সংগ্রহ করে থাকে।

মজুরির কাজ
অধিকাংশ সাঁওতাল পরিবার কৃষিকাজের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ধরনের মজুরের কাজ করে থাকে। তারা বিভিন্ন সময় জমিদারের জমিতে ধান লাগানো থেকে শুরু করে চাষবাদ সহ ফসল তোলা সংগ্রহ এবং জমিতে সেচের কাজ ইত্যাদি তারা করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন ধরনের সড়ক নির্মাণ কাজ এবং শ্রমজীবী কাজেও তারা গুরুত্বপূর্ণ পালন করে থাকে।

মৃৎশিল্প ও কারুশিল্প
সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মাঝে মৃৎশিল্প কিংবা কারু শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ পেশা। তারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গৃহস্থালি আসবাবপত্র দৈনিক দিন জীবনের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার সামগ্রী তারা তৈরি করে থাকে। এছাড়াও সাঁওতাল সম্প্রদায় মহিলারা বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ঝুড়ি ও আসবাবপত্র তৈরি করে থাকে। যা তারা এগুলো বাজারে বিক্রি করে অনেক অর্থ আয় করতে পারে।

গৃহপালিত পশুপালন
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ সাঁওতাল সম্প্রদায় মানুষরা গৃহপালিত পশু পালন তাদের প্রধান কাজের একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা গরু মুরগির ছাগল ইত্যাদি পালন করে তাদের পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় দুধ মাংস এবং অন্যান্য সামগ্রী অতি সহজে পেয়ে থাকে। এছাড়াও গরু দিয়ে তারা কৃষি জমিতে চাষের কাজে ব্যবহার করে।

আধুনিক যুগে সাঁওতালদের কাজকর্ম
বর্তমান যুগ মানে তথ্যপ্রযুক্তির আধুনিক যুগ। আর এই যুগে অধিকাংশ সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তির সাথে তারা প্রতিনিয়ত পরিচিত হচ্ছে। যার ফলে তাদের মাঝে কর্মসংস্থানের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। আধুনিক যুগে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা লাভ করে তারা বিভিন্ন পেশায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলছে। তবে তাদের মাঝে প্রাচীন পেশা ও কাজের কিছু কিছু নিদর্শন এখনো লক্ষ্য করা যায় যা তারা তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়কে সর্বদা অক্ষুন্ন রাখে।

সাঁওতাল ভাষার নাম কি?

সাঁওতাল ভাষা সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম প্রাচীন এবং ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ভাষা। তাদের এ ভাষার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও জীবনধারার জন্য হাজার হাজার বছর ধরে ব্যাপকভাবে সমৃদ্ধ হয়ে এসেছে। এই ভাষা তাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত যাকে আমরা সাঁওতালি ভাষা নামে জানি। তবে সাঁওতালি জনগোষ্ঠীর ভাষা

প্রধানত ভারতবর্ষে ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা এবং আসাম সহ বিভিন্ন প্রদেশে প্রচলিত রয়েছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর জায়গা গুলোতে এ ভাষা প্রচলন রয়েছে। তবে সাঁওতালি ভাষার একটি নিজস্ব লিপি রয়েছে। যা সমগ্র বিশ্বব্যাপীর কাছে এই ভাষা অলচিকি লিপি নামে পরিচিত।

তবে এই ভাষা সর্বপ্রথম ১৯২৫ সালে রঘুনাথ মুরমু প্রবর্তন করেন। আর এই ভাষা প্রবর্তনের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ধরনের নাটক কবিতা সাঁওতালি গান ও সাহিত্যের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। বিশেষ করে সাঁওতালের সাহিত্য গুলো গ্রামীণ বাংলার জীবন প্রকৃতি ও আদিবাসীদের ধর্মীয় সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন ধরনের সাঁওতালি ভাষার

লোকগান লোক কাহিনী ইত্যাদি বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। তবে এই অল চিকি লিপিটি সাঁওতালি ভাষার ধ্বনি গত বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন ঘটায়। বর্তমানে সাঁওতালি ভাষা ভারতবর্ষের সংবিধানে অষ্টম তফসিল যুক্ত একটি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যা যা সরকারি স্কুল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাঁওতালি ভাষার প্রচলন এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

যাতে করে একদিন নতুন প্রজন্ম সহজে মাতৃভাষার সাথে পরিচয় করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে সাঁওতালি ভাষা এখনো কোনভাবে স্বীকৃতি পায়নি। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ভাষার কোন প্রচলন বা ব্যবহার চালু হয়নি।

সাঁওতালদের গ্রাম দেবতার নাম কী?

সাঁওতাল সম্প্রদায় জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাস রীতি-নীতি এবং সামাজিক অবকাঠামো রয়েছে। যা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রকৃতির সাথে গভীর সংযোগ এবং ধর্মীয় আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। বিশেষ করে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাসের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো তাদের গ্রাম দেবতা। যেটাকে জাহের এরা বলে অনেকে বলে থাকে। 

আর এই জন্য দেবতা বা জাহের এরাকে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের প্রতিটি পরিবারের অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যাতে করে সকল সাঁওতাল সম্প্রদায় পরিবার গুলোকে সুরক্ষা এবং কল্যাণের দায়িত্ব প্রতিনিয়ত নিয়ে থাকে। তবে অধিকাংশ সাঁওতালরা বিশ্বাস করে যে জাহের দেবতা বা জাহের এরা গ্রামবাসীদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের আপদ বিপদের হাত 

থেকে রক্ষা এবং সমাজে শান্তি সমৃদ্ধ বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ জাহের অর্থ হল পবিত্র এবং এরা অর্থ দেবী। তাই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষরা তাদের গ্রামের কেন্দ্রস্থলে একটি পবিত্র মন্দির তৈরি করে, যেটাকে তারা জাহের থান বলে নাম দিয়েছে। এই পবিত্র স্থানটিতে কোন দেবদেবীর মূর্তি বা চিহ্ন থাকে না। তবে সেখানকার প্রাকৃতিক 

পরিবেশ এবং গাছপালার মধ্যে দেব-দেবীর অস্তিত্ব বিদ্যামান বলে সাঁওতালরা অনুভব করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের পূজা এবং ধর্মীয় উৎসব পালন করার সময় এই পবিত্র স্থানটি বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়ে থাকে। যেখানে গ্রামের পুরোহিত বা নাইকি মাধ্যমে দেব-দেবীর পূজা পরিচালনা শুরু করেন। সাঁওতালদের জীবনে গ্রাম দেবতা বা জাহের এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

অধিকাংশ সাঁওতাল সম্প্রদায় মানুষরা বিশ্বাস করে যে তাদের গ্রাম দেবতা বিভিন্ন ধরনের আপদ বিপদের হাত থেকে রক্ষা করে এবং তাদের পরিবারগুলোতে শান্তি প্রদান করে থাকে। এছাড়াও তারা তাদের বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়াতে দেবীর কাছে তারা বিভিন্ন সময়ে ভক্তি সহকারে প্রার্থনা করে এবং আশীর্বাদ লাভের জন্য বিভিন্ন ধরনের পূজা আয়োজন করে থাকে।

সাঁওতালদের গ্রাম প্রধানকে কি বলা হয়?

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মধ্যে সাঁওতাল সম্প্রদায় হলো অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী। তাদের ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি ঐতিহ্য জীবন প্রণালী এবং সামাজিক বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাঁওতালদের সমাজ ব্যবস্থা কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন দ্বারা পরিচালিত এবং সমাজে একজন প্রধান ব্যক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

সাঁওতাল সমাজের গ্রাম প্রধানকে মানজি হাঁড়াম নামে ডাকা হয়। অর্থাৎ তিনি সমাজের সকলের শ্রদ্ধা ও নেতৃত্বের প্রতীক। কেননা মানজি হাঁড়াম সাঁওতাল সমাজের একজন বড় নেতা, যিনি গ্রামের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। গ্রামের মানুষের মধ্যে সুষ্ঠু শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

বিশেষ করে মানজি হাঁড়াম সাঁওতাল সমাজের আচার অনুষ্ঠান বিবাহ মীমাংসা সহ সমাজের বিভিন্ন ধরনের দিকগুলোর পরিচালনার জন্য তার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ মানজি হাঁড়াম প্রধান কাজ হল যে, সমাজের জন্য সর্বদা শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং গ্রামের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা গুলো সমাধান করা। এছাড়াও সমাজের মধ্যে কোন ব্যক্তি 

যদি তাদের আইন বা নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে, মানজি হাঁড়াম নিকটে অভিযোগ জানানো হয় এবং তিনি সে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেন। তাই মানজি হাঁড়াম একধারে সমাজের অভিভাবক ও নৈতিকতার রক্ষক হিসেবে কাজ করে থাকেন।

লেখকের শেষ কথাঃসাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি?

প্রিয় পাঠক আজকের এই পোস্টে আমি আলোচনা করেছি,সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি?এ বিষয় নিয়ে। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনারা সাঁওতালদের প্রধান উৎসব কয়টি ও কি কি?এই সম্পর্কে জেনেছেন। তাই আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা যদি সঠিক তথ্য পেয়ে উপকৃত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার আত্মীয় স্বজন

কিংবা বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি এই বিষয় নিয়ে শেয়ার করবেন এবং তাদেরকে পড়ার জন্য সুযোগ করে দিবেন। প্রতিনিয়ত এই রকম সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এরোস বিডি ব্লগ ওয়েবসাইট নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url