বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত?

পিরিয়ডের সময় পেটে ব্যথা হলে করণীয়বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত? অনেকের কাছে এই বিষয়টিও অজানা। আপনাদের কাছে এ অজানা তথ্য জানানোর জন্য আজকের এই আর্টিকেলটি।
বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত?

বাচ্চাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত? আজকের এই আর্টিকেলে সমস্যার সমাধান গুলো বিস্তারিতভাবে আমরা আলোচনা করব।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত?

বমি হওয়া প্রতিটি মানুষের জীবনে একটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা। যা প্রতিটা পদক্ষেপে দৈনন্দিন জীবনে মানুষকে আরো বেশি প্রভাবিত করতে পারে। এটি যেমন একদিকে আমাদের শরীরের একটি প্রতিক্রিয়া, যা বিভিন্ন কারণে ঘটে থাকে। এগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্য হলো যে,খাদ্য বিষক্রিয়া, ভাইরাস ইনফেকশন, অথবা অন্য কোনো ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হয়ে থাকে। 
অনেক সময় দেখা যায় যে যখন কেউ বমি করে, তখন তার শরীর প্রচুর পরিমাণে তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট হারায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সুতরাং, এ ধরনের সমস্যার পরিস্থিতির মধ্যে সকল মানুষকে সঠিক সময়ে সঠিক খাবার নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব, বমি হলে কী ধরনের খাবার এবং পানীয় গ্রহণ করা যাবে। 

যাতে করে আপনার শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে এবং অন্য আরো পাঁচজন সাধারণ মানুষের মত জীবন যাপন করতে পারেন। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের উদ্দেশ্যে কিছু সাধারণ এবং কার্যকরী পরামর্শ প্রদান করব। যা আপনার দৈনন্দিন জীবনে সুস্থতা ফিরে আনার জন্য অত্যন্ত কার্যকর সহায়ক হতে পারে । তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলুন আমরা জেনে আসি বমি হলে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত? এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
তরল পদার্থের গুরুত্ব
বমির পরে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল এবং ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে যায়। তাই প্রথমেই আপনি যে কাজটি করবেন তা হলো আপনি পরিমাণ মতো পর্যাপ্ত তরল পান করা। তবে, আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে খুব বেশি পরিমাণে পানি পান করা উচিত নয়। কারণ অতিরিক্ত পরিমাণে পানি পান করা এটি আবার বমির কারণ হতে পারে। তাই আপনাকে অবশ্যই একটু একটু করে গরম পানির সাথে লবণ ও চিনির মিশ্রণ, স্যুপ, বা ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করুন। এছাড়াও লেবু মিশ্রিত পানি পান করতে পারে।
হালকা খাবার
বমির পর কঠিন খাবার খাওয়ার আগে কিছু সময় অপেক্ষা করুন। কেননা যখন আপনার পেট শান্ত মনে হবে, তখন হালকা ও সহজে হজমযোগ্য এই ধরনের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। হালকা খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে শুকনো রুটি, ক্র্যাকারস, সেদ্ধ ভাত, অথবা সেদ্ধ আলু। এই খাবারগুলি আপনার পেটের জন্য আরামদায়ক এবং সহজে হজম হয়।
আদা এবং পিপারমিন্ট
আদা এবং পিপারমিন্ট প্রাকৃতিকভাবে বমি কমাতে সাহায্য করে। আদার চা বা পিপারমিন্ট চা আপনার পেটকে শান্ত করতে এবং বমি অনুভূতি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
সুষম খাদ্য
যদি আপনি কিছু সময় ভালো বোধ করেন এবং আপনার শরীর প্রয়োজনীয় পরিমাণে তরল গ্রহণ করেছে, তবে সুষম খাদ্য গ্রহণ শুরু করতে পারেন। কিন্তু এই সময়ে তেলে ভাজা বা অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। সহজ ও স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন দই, পনির, বা মিষ্টি আলু আপনার জন্য ভাল হতে পারে।

বার বার বমি হলে করণীয়

বার বার বমি হলে তা শরীরের জন্য খুবই অস্বস্তিকর এবং এটি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তবে অনেক সময় দেখা যায় যে,বার বার বমি হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এজন্য বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। কেননা শরীরের শক্তি পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্রামের বিকল্প কোন কিছু হয় না। তবে বারবার বমি হওয়ার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ 
বেরিয়ে যায় এবং ডিহাইড্রেশন ঘটে যেতে পারে। আর এই জন্য বারবার বমি থেকে নিরাময় পেতে হলে আপনি নিয়মিত ওরস্যালাইন. খেতে পারেন। এমনকি দুধ এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানি সর্বদাই এড়িয়ে চলা উচিত। তাছাড়া বমি বন্ধ হওয়ার পরে আপনার উচিত সহজে হজম হওয়া যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে, যেমন টোস্ট, পাউরুটি, এবং সাদা ভাতের মতো হালকা খাবার গ্রহণ করতে হবে।

কোন মতেই মসলা যুক্ত তৈলাক্ত বা দুধ জাত খাবার সর্বদা পরিহার করতে হবে। আপনার যদি বার বার বমি হয় এবং তার সাথে ডিহাইড্রেশন জ্বর, তীব্র পেটব্যথা, মাথাব্যথা, মাথা ঘরা এবং শ্বাসকষ্টের মতো বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ যদি দেখা দেয় তাহলে, অতি দ্রুত নিকটস্থ একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে 

এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তাই পরিশেষে বলতে পারি যে,বার বার বমি হওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং এর পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। সঠিক যত্ন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা এই অবস্থার চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে। যদি উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া উচিত।

বাচ্চাদের বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত

বাচ্চাদের বমি হলে তাদের পুষ্টি এবং হাইড্রেশন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যার একমাত্র প্রধান কারণ হলো বাচ্চাদের বমি হলে তাদের পেট ও স্বাস্থ্যের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। এ সময় তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং ওরস্যালাইন যুক্ত পানি সহ ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ তরল পদার্থ খাওয়ানো উচিত। যাতে করে বাচ্চাদের শরীরে পানির ঘাটতি চাহিদা পূরণ হয়।
কেননা বমি হওয়ার পরে বাচ্চাদের পেট সাধারণত সংবেদনশীল অবস্থায় থাকে তাই এ সময়ে বাচ্চাদের বিভিন্ন ধরনের হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়ানো একান্ত জরুরী। এতে করে দেখা যায় যে এ ধরনের খাবার গুলো সহজে তারা হজম করতে পারে। আর এ সমস্ত সহজ উপাচ্য ও হালকা খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে ভাত, মুরগির স্যুপ, কলা, টোস্ট, দই ইত্যাদি। 

কিন্তু সর্বদা একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে কোন অবস্থাতে অতিরিক্ত তৈলাক্ত বা মসলাদার খাবার বাচ্চাদের খাওয়ানো উচিত নয়। কেননা অতিরিক্ত তৈলাক্ত মসলাদার যুক্ত খাবার বাচ্চাদের বমির সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। খাবার খাওয়ানো উচিত এবং একেবারে বেশি পরিমাণে খাবার কখনো খাওয়ানো উচিত নয় যদি বাচ্চার বমি হওয়ার লক্ষণটি না কমে বরং দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে যত দ্রুত নিকটস্থ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

হঠাৎ বমি বমি ভাব হওয়ার কারণ

হঠাৎ বমি বমি ভাব হওয়ার অনেকগুলো কারণ এবং উপসর্গ থাকতে পারে। তবে এগুলোর মধ্যে প্রধান কারণ গুলো হল খাদ্যজনিত বিভিন্ন ধরনের খাদ্য ও পানীয় মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত ও দূষিত পদার্থ গ্রহণ করলে শরীরে হঠাৎ করে বমি বমি ভাব হতে পারে। আর এ ধরনের বিষাক্ত ও দূষিত পদার্থগুলো বিশেষ করে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস দ্বারা সংক্রামন ঘটে থাকে।

যা পাকস্থলীতে প্রবেশ করে এবং বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। এছাড়াও পেটের মধ্যে অতিরিক্ত এসিড জমা হলে গ্যাস্ট্রিকের প্রধান সমস্যার কারণ হতে পারে এবং বমি বমি ভাব হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় যে, তীব্র মাথাব্যথা এবং মানসিক চাপের কারণেও বমি বমি ভাব হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। 

আর এ ধরনের সমস্যাগুলো বিশেষ করে শরীরের পাকস্থলীতে প্রভাব ফেলে এবং বমি বমি ভাব সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তীব্র গন্ধ এবং ভয়ঙ্কর কোন এক দৃশ্য দেখলে হঠাৎ তাদের বমি বমি হওয়ার লক্ষণ দেখা দেয়।

বমি হলে কি খাবার খাওয়া উচিত না

বমি হলে বিশেষ করে পাকস্থলীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া একান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা বমি হওয়ার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই বমি হওয়ার পর কিছু বিশেষ খাবার গুলো রয়েছে যেগুলো এড়িয়ে চলা আমাদের উচিত। কেননা এ ধরনের খাবারগুলো যদি আমরা এড়িয়ে না চলি পুনরায় গ্রহণ করি তাহলে পাকস্থলীর অবস্থাকে বিভিন্নভাবে আরও বেশি খারাপ করতে পারে

এবং বমির হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই বমি হওয়ার পর দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার যেমন দই পনির মাখন এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এ সমস্ত খাবারগুলো পাকস্থলীতে অতিরিক্ত পরিমাণে এসিড উৎপন্ন করে যার কারণে পেটের মধ্যে বমি ও অস্বস্তিকর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার ভাজাপোড়া খাবার

ও চর্বিযুক্ত খাবার কখনো খাওয়া উচিত নয়। কারণ এ ধরনের খাবার গুলো পাকস্থলীতে বিভিন্ন ধরনের চাপ ও প্রভাবের সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও সরকার ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং অতিরিক্ত ক্যাফিন যুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এ ধরনের খাবার পুনরায় গ্রহণ করলে বমি হওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। তাই পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে,

বমি হওয়ার পর অতি প্রাথমিকভাবে কেমন খাবার খাওয়া উচিত তা নির্ধারণ করার সময়, ছোট ছোট পরিমাণে সহজপাচ্য খাবার এবং তরল খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। যদি বমি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্য কোনও গুরুতর লক্ষণ দেখা দেয়, তবে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই পদক্ষেপগুলো মেনে চললে, পাকস্থলীর স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে এবং বমির পর সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়তা করবে।

লেখকের শেষ কথা

বমি একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি, কিন্তু সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আপনি দ্রুত সুস্থ হতে পারেন। তরল পদার্থের সঠিক পরিমাণে গ্রহণ, হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার, এবং প্রাকৃতিক উপাদানগুলির ব্যবহার আপনার পেটকে শান্ত রাখতে সহায়ক হতে পারে। যদি বমি অব্যাহত থাকে অথবা অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অতি দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে সতর্ক থাকুন এবং সুস্থ থাকুন। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি সঠিক তথ্য পেয়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে, আপনার পরিচিত বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে এই বিষয়ে নিয়ে বেশি বেশি শেয়ার করবেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটির ফলো করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এরোস বিডি ব্লগ ওয়েবসাইট নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url