কুরবানি ফরজ হয় কখন?
হজ্জ সম্পর্কে কোরআনের আয়াত ও হাদিসপ্রিয় পাঠক আপনি কি কুরবানি ফরজ হয় কখন? এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী, তাহলে আজকের
আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কোরবানি দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে জানতে হলে সমগ্র আর্টিকেল
জুড়ে চোখ রাখুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃআজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা কোরবানি ফরজ সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিতভাবে
আলোচনা করব।
কুরবানি ফরজ হয় কখন?
কুরবানি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিধান, যা ঈদুল আযহা
উপলক্ষে পালিত হয়। ইসলামিক শরীয়াহ অনুসারে, কুরবানি ফরজ নয় বরং ওয়াজিব
(বাধ্যতামূলক) হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে এটি করার কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে।
প্রতি বছর ঈদুল আযহা উপলক্ষে মুসলমানরা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আত্মত্যাগের
প্রতীক হিসেবে
আরো পড়ুনঃ শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া
কোরবানি দান করে থাকেন। কিন্তু কুরবানি কাদের ওপর ফরজ? কোরবানি দেওয়ার
নিয়ম-কানুন কী? এই প্রশ্নগুলো অনেক মুসলমানের মনেই থাকে। নিচে কুরবানি ওয়াজিব
হওয়ার প্রধান শর্তগুলো উল্লেখ করা হলো।
- মুসলিম হওয়াঃ কুরবানি শুধুমাত্র মুসলিমদের উপরই ফরজ।
- প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াঃ কুরবানি করার জন্য বয়স্ক এবং মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। ছোট বাচ্চাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
- আর্থিক সামর্থ্যঃ যাদের উপর যাকাত ফরজ হয়, তাদের উপরই কুরবানি ওয়াজিব হয়। অর্থাৎ, যাদের নেসাব পরিমাণ সম্পদ (৭.৫ তোলা সোনা বা ৫২.৫ তোলা রূপা বা এর সমমূল্যের অর্থ) আছে এবং সেই সম্পদ এক বছর ধরে তাদের অধীনে রয়েছে, তাদের কুরবানি করতে হবে।
- বাসিন্দা হওয়াঃ কুরবানি মূলত স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য। মুসাফিরদের (যারা এক শরীয়াহ অনুযায়ী মুসাফিরের শর্ত পূরণ করেন) উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
- ঈদুল আযহা উপলক্ষে সময়ঃ কুরবানি শুধুমাত্র ঈদুল আযহার দিন এবং তার পরের দুই দিন (১০ই জিলহজ্জ থেকে ১২ই জিলহজ্জ পর্যন্ত) করা যায়। এই সময়ের মধ্যে কুরবানি না করলে, তা আর আদায় করা সম্ভব নয়।
কোরবানি দেওয়ার নিয়ম-কানুন
কোরবানি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় রীতিনীতি। ঈদুল আযহার দিনে
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ত্যাগের প্রতীক হিসেবে কোরবানি দেওয়া হয়। কুরবানি
দেওয়া ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা ঈদুল আযহা উপলক্ষে পালন করা
হয়। কুরবানির জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন ও শর্ত রয়েছে, যা মেনে চলা
অত্যন্ত জরুরি। নিচে কুরবানি দেওয়ার মূল নিয়ম-কানুন ও শর্তগুলো উল্লেখ করা হলো
কুরবানি দেওয়ার সময়
- কুরবানি শুধুমাত্র ঈদুল আযহার দিন এবং তার পরের দুই দিন (১০ই জিলহজ্জ থেকে ১২ই জিলহজ্জ পর্যন্ত) করা যায়।
- ঈদের নামাজ পড়ার পর কুরবানি শুরু করা হয় এবং ১২ই জিলহজ্জ সূর্যাস্ত পর্যন্ত কুরবানি করা যায়।
কুরবানির পশু
- প্রকারঃ কুরবানির জন্য গরু, মহিষ, উট, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
বয়স
- উটঃ কমপক্ষে পাঁচ বছর বয়সী।
- গরু ও মহিষঃ কমপক্ষে দুই বছর বয়সী।
- ছাগল ও ভেড়াঃ কমপক্ষে এক বছর বয়সী। তবে যদি ভেড়া বা দুম্বা বড় এবং স্বাস্থ্যবান হয় তবে ছয় মাস বয়সেরও কুরবানির জন্য উপযুক্ত।
- শারীরিক অবস্থাঃ পশু শারীরিকভাবে সুস্থ এবং কোনরকম ত্রুটি-বিচ্যুতি মুক্ত হতে হবে। যেমন, অন্ধ, খোঁড়া, কানে বা শরীরের অন্য কোনো অংশে গুরুতর ক্ষতি নেই।
কুরবানির পদ্ধতি
- নিয়ত করাঃ কুরবানি শুরু করার আগে মনে মনে বা মুখে নিয়ত (উদ্দেশ্য) করতে হবে।
- বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বলাঃ পশু জবাই করার সময় "বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার" বলা আবশ্যক।
- জবাই করাঃ ধারালো ছুরি দিয়ে পশুর গলা কেটে খাদ্যনালী, শ্বাসনালী এবং দুটি রক্তনালী কেটে দেওয়া হয়।
- রক্ত বের করাঃ পশু জবাই করার পর সম্পূর্ণ রক্ত বের হতে দিতে হবে।
কুরবানির মাংস বণ্টন
- বণ্টন পদ্ধতিঃ কুরবানির মাংস সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়:
- এক ভাগ নিজের পরিবারের জন্য।
- এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধু-বান্ধবের জন্য।
- এক ভাগ গরিব-দুঃস্থদের জন্য।
অন্যান্য নির্দেশনা
- পরিচ্ছন্নতাঃ কুরবানির সময় এবং পরবর্তীতে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা।
- মানবিক আচরণঃ পশুর প্রতি দয়াশীল আচরণ করা এবং তাদের কোনোরকম অযথা কষ্ট না দেওয়া।
- চামড়ার ব্যবহারঃ কুরবানির পশুর চামড়া দান করা যেতে পারে, তবে তা বিক্রি করা যাবে না এবং বিক্রির অর্থও দান করা উচিত।
- নিজ হাতে জবাইঃ সম্ভব হলে নিজের হাতে পশু জবাই করা এবং যদি না পারেন তবে উপস্থিত থাকা।
সুন্নতি আমল
- ঈদের নামাজঃ ঈদের নামাজ আদায় করে কুরবানি শুরু করা।
- খাবার গ্রহণঃ ঈদের দিন সকালে কিছু না খেয়ে কুরবানি শেষে কুরবানির মাংস দিয়ে খাবার শুরু করা।
এই নিয়ম-কানুন মেনে কুরবানি দিলে তা শরীয়াহ মোতাবেক সঠিকভাবে আদায় হবে এবং
আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি অর্জিত হবে।
কোরবানি দেওয়ার ফজিলত
কুরবানি দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে ইসলামে অনেক বর্ণনা রয়েছে। কুরবানি হল একটি
গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত যা ঈদুল আযহার সময় পালন করা হয় ইসলামে কোরবানি একটি
গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। জিলহজ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে নির্ধারিত শর্তাবলী
পূরণ করে কোরবানি করা মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব। কোরবানি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা,
আরো পড়ুনঃ শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস
তাকওয়া ও আত্মত্যাগের প্রতীক।কোরবানি দেওয়ার ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ও
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বহু হাদিস ও আয়াতে বর্ণনা করেছেন। নিচে কুরবানি দেওয়ার কিছু
ফজিলত উল্লেখ করা হলো
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
- কুরবানি করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন তোমাদের কুরবানির পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, বরং তোমাদের তাকওয়া (পরহেজগারি) তাঁর কাছে পৌঁছায়।(সুরা হজ্জ, ২২:৩৭)
কিয়ামতের দিনে পশুসমূহের সাক্ষ্য
- রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন কুরবানির পশুসমূহ কিয়ামতের দিন তাদের শিং, লোম এবং খুরসহ আসবে। কুরবানির পশুর রক্ত যমীনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে একটি উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। তাই তোমরা মন খুলে কুরবানি কর। (তিরমিজি: ১৪৯৩)
গুনাহ মাফ
- কুরবানি করার মাধ্যমে পূর্বের গুনাহগুলো মাফ হয়ে যায়। নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘মানুষের সন্তান কুরবানির দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ হলো কুরবানি করা। কুরবানির পশু কিয়ামতের দিন তার শিং, লোম ও খুর নিয়ে হাজির হবে। নিশ্চয়ই কুরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। তাই তোমরা মন থেকে কুরবানি করো। (তিরমিজি, ইবন মাজাহ)
- কুরবানির মাধ্যমে অনেক নেকি অর্জন করা যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি আছে। (ইবনে মাজাহ: ৩১২۷)
গরীব ও অসহায়দের মাঝে খুশি বিতরণ
- কুরবানির মাংস গরিব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, যা তাদের মাঝে আনন্দ বয়ে আনে এবং তাদের প্রয়োজন মেটায়।
ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাহ পালন
- কুরবানি করার মাধ্যমে আমরা ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাহ পালন করি এবং তাঁর আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করি।
সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের প্রতীক
- কুরবানি সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও সাম্যের বার্তা বহন করে। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একসাথে এই ইবাদত পালন করে।
আত্মার পরিশুদ্ধি
- কুরবানি আমাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং আল্লাহর প্রতি আমাদের আনুগত্য ও ভালবাসা প্রদর্শনের সুযোগ দেয়।
দানশীলতা বৃদ্ধি
- কুরবানি করার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে দানশীলতা এবং পরোপকারিতার গুণাবলী বৃদ্ধি পায়।
এই ফজিলতগুলোর মাধ্যমে বোঝা যায়, কুরবানি করা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কর্তব্য
নয় বরং এটি আধ্যাত্মিক উন্নতি, সামাজিক সংহতি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের
একটি মাধ্যম।
লেখকের শেষ কথা
প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার পর
অবশ্যইকুরবানি ফরজ হয় কখন এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। আজকের
আর্টিকেলটিতে আপনাদের সুবিধার জন্য, কুরবানী দেওয়ার নিয়ম ও কুরবানী করার পদ্ধতি
এবং কুরবানী বিভিন্ন ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
আজকের আর্টিকেলটি পড়ে কুরবানি ফরজ হয় কখন এই বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি উপকৃত
হন তাহলে, আপনার পরিচিত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে এই বিষয় নিয়ে বেশি বেশি
শেয়ার করবেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ফলো
করুন।
এরোস বিডি ব্লগ ওয়েবসাইট নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url