আমন ধানের জাত সমূহ ২০২৪

বারোমাসি সবজি চাষের তালিকাপ্রিয় পাঠক আপনি কি আমন ধানের জাত সমূহ ২০২৪ সালের চাষযোগ্য ধানের জাত সমূহ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আমন ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহ ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি সমগ্র অংশের চোখ রাখুন।
আমন ধানের জাত সমূহ ২০২৪
পোস্ট সূচিপত্রঃআজকের এই আর্টিকেলে আমরা ২০২৪ সালের আমন ধানের জাতসমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করব।

আমন ধানের জাত সমূহ ২০২৪

আমন ধান বাংলাদেশের কৃষিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ফসল। সাধারণত বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত জমিতে এই ধানের চাষ হয়। আমন ধানকে প্রধানত তিনটি প্রকারে বিভক্ত করা যায় প্রাথমিক আমন, মধ্য আমন, এবং দেরি আমন। সাধারণত আমন ধান জুন জুলাই মাসে বপন করা হয়ে থাকে এবং অক্টোবর ও নভেম্বরে মাঝামাঝি থেকে শুরু করে শেষের দিক 
পর্যন্ত আমন ধান কাটা হয়। বর্তমানে রাজশাহী অঞ্চল আমন ধান চাষের জন্য বেশ উপযোগী এবং সেখানকার মাটি ও জলবায়ু আমন ধান চাষের বিদ্যমান।বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI) প্রতি বছর নির্দিষ্ট এলাকার জন্য উপযোগী ধানের জাতের তালিকা প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের আমন মৌসুমের জন্য রাজশাহী অঞ্চলে নিম্নলিখিত জাতগুলি চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
বিআরবি ১১
  • বৈশিষ্ট্যঃ এ জাতের ধানের চাল মাঝারি মোটা
  • বপনকালঃ ৮ থেকে ২৯ শে জুন।
  • গড় জীবনকালঃ ১৪৫ দিন।
  • চারার বয়সঃ ২৫ থেকে ৩০ দিন।
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ২৪০০ কেজি
ব্রি ধান৩৩
  • বৈশিষ্ট্যঃ চাল খাটো ধরনের মোটা ও পেটে সাদা দাগ রয়েছে।
  • বপনকালঃ ১৫ জুন-৯ আগস্ট
  • গড় জীবনকালঃ ১৫০ দিন।
  • চারার বয়সঃ ৩০-৫০ দিন
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ২০০০ কেজি
ব্রি ধান৩৯
  • বৈশিষ্ট্যঃ চাল লম্বা ধরনের ও মাঝারি চিকন
  • বপনকালঃ ৫-১৪ জুলাই
  • গড় জীবনকালঃ ১২২ দিন
  • চারার বয়সঃ ২০-২৫ দিন
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ১৮০০ কেজি
ব্রি ধান ৪৯
  • বৈশিষ্ট্যঃ চাল মাঝারি কিছুটা মোটা, দেখতে অনেকটা নাইজারশাইলের মত
  • বপনকালঃ ১৫ জুন থেকে ১৪ ই জুলাই
  • গড় জীবনকালঃ ১৩৫ দিন।
  • চারার বয়সঃ ২৫-৩০ দিন
  • ফলনঃ একই প্রতি গড় ফলন ২২০০ কেজি
ব্রি ধান ৫১
  • বৈশিষ্ট্যঃ চাল , মাঝারি ধরনের মোটা, স্বচ্ছ ও সাদা
  • বপনকালঃ ৮ - ২৯ জুন
  • গড় জীবনকালঃ ১৪০ দিন ও ১৫৫ দিন জলমগ্ন অবস্থায় অবস্থায়
  • চারার বয়সঃ ৩০ -৩৫ দিন
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ১৮০০ কেজি
ব্রি ধান ৭৫
  • বৈশিষ্ট্যঃ দানার রং সাধারণত সোনালী ও কিছুটা মাঝারি চিকন
  • বপনকালঃ ২১ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট
  • গড় জীবনকালঃ ১১০ -১১৫ দিন
  • চারার বয়সঃ ২১ -২৫ দিন
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ২০০০ কেজি
ব্রি ধান ৮৭
  • বৈশিষ্ট্যঃ এ জাতের ধানের দানা লম্বা ও চিকন
  • বপনকালঃ ১৫ জুন থেকে ৭ জুলাই
  • গড় জীবনকালঃ ১২৫ - ১২৮ দিন।
  • চারার বয়সঃ ২৫ -৩০ দিন
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ২৪০০ কেজি
বিনা ধান ৭
  • বৈশিষ্ট্যঃ দানার সাইজ চিকন ও সাদা
  • বপনকালঃ ২৫ জুন থেকে ১৪ জুলাই
  • গড় জীবনকালঃ ১১০ -১২০ দিন
  • চারার বয়সঃ ২০ -২৫
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ১৯৫০ কেজি
বিনা ধান ১৬
  • বৈশিষ্ট্যঃ চাল লম্বা ধরনের ও চিকন
  • বপনকালঃ ১০ জন থেকে ২৫ জুলাই
  • গড় জীবনকালঃ ১০০ -১০৫ দিন
  • চারার বয়সঃ ২২ -২৬ দিন
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ২২৫০ কেজি
বিনা ধান ১৭
  • বৈশিষ্ট্যঃ চাল লম্বা সাইজের এবং চিকন
  • বপনকালঃ ২২ জন থেকে ১৪ জুলাই
  • গড় জীবনকালঃ ১১২ -১১৮ দিন
  • চারার বয়সঃ ২০ -২৫ দিন
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ২৮০০ কেজি
বিনা ধান ২২
  • বৈশিষ্ট্যঃ চাল সাধারণত লম্বা চিকন দানা বিশিষ্ট
  • বপনকালঃ ১০ জন থেকে ১৫ জুলাই
  • গড় জীবনকালঃ ১১২ -১১৫ দিন
  • চারার বয়সঃ ২২ -২৫ দিন
  • ফলনঃ একর প্রতি গড় ফলন ২৬০০ কেজি

আমন ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহ ও বৈশিষ্ট্য

২০২৪ সালে আমন ধানের বেশ কিছু নতুন জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং পরিবেশগত প্রতিকূলতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। এই জাতগুলো কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এছাড়াও ২০২৪ সালের আমন ধানের নতুন ও উন্নত জাতগুলো বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

এই জাতগুলো দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষকদের আর্থিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সহায়তায় আমন ধানের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করবে। নিচে আমন ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহ ও বৈশিষ্ট্য দেওয়া হল।
বারিধান ৯২
  • বৈশিষ্ট্যঃ উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী।
  • ফলনঃ প্রতি হেক্টরে ৬-৭ টন।
  • পাকার সময়ঃ মধ্যম সময়ে পাকার উপযোগী।
বারিধান ৯৩
  • বৈশিষ্ট্যঃ উচ্চ মানের বীজ ও ধান, প্রতিকূল পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম।
  • ফলনঃ প্রতি হেক্টরে ৫-৬ টন।
  • পাকার সময়ঃ দেরি আমন।
বারিধান ৯৪
  • বৈশিষ্ট্যঃ অল্প সময়ে পাকার উপযোগী, উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী।
  • ফলনঃ উচ্চ।
  • পাকার সময়ঃ স্বল্প সময়ে পাকার উপযোগী।
ব্রি ধান ৫২
  • বৈশিষ্ট্যঃ বন্যা সহিষ্ণু,গাছের উচ্চতা মাঝারি।
  • ফলনঃ হেক্টর প্রতি ৫-৫.৫ টন
  • পাকার সময়ঃ ১৪৫-১৫০ দিনে পরিপক্ক হয়
ব্রি ধান ৬২
  • বৈশিষ্ট্যঃ লবণাক্ত সহিষ্ণু, উপকূলীয় এলাকায় ভালো ফলন দেয়
  • ফলনঃ হেক্টর প্রতি ৪.৫-৫ টন
  • পাকার সময়ঃ ১৪০-১৪৫ দিনে পরিপক্ক হয়
ব্রি ধান ৭১
  • বৈশিষ্ট্যঃ তাপ সহিষ্ণু,উচ্চ ফলনশীল
  • ফলনঃ হেক্টর প্রতি ৫-৬ টন
  • পাকার সময়ঃ ১৪৫-১৫০ দিনে পরিপক্ক হয়
ব্রি ধান ৭৭
  • বৈশিষ্ট্যঃ উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো
  • ফলনঃ হেক্টর প্রতি ৫.৫-৬ টন
  • পাকার সময়ঃ ১৪০-১৪৫ দিনে পরিপক্ক হয়

উন্নত জাতের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা

বৈশিষ্ট্য
  • উচ্চ ফলনঃ উন্নত জাতের ফসল সাধারণ জাতের তুলনায় অনেক বেশি ফলন দেয়।
  • রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ উন্নত জাতের ফসল রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণের বিরুদ্ধে বেশি প্রতিরোধী।
  • শুষ্কতা ও লবণাক্ততা সহনশীলতাঃ কিছু উন্নত জাতের ফসল শুষ্কতা ও লবণাক্ত মাটিতেও চাষ করা যায়।
  • পুষ্টিগুণ বৃদ্ধিঃ অনেক উন্নত জাতের ফসলে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ বেশি থাকে।
  • দ্রুত বৃদ্ধিঃ উন্নত জাতের ফসল সাধারণ জাতের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
  • ভালো মানেরঃ উন্নত জাতের ফসলের দানা বা ফলের মান সাধারণ জাতের তুলনায় ভালো হয়।
সুবিধা
  • খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধিঃ উন্নত জাতের ফসল চাষের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
  • কৃষকের আয় বৃদ্ধিঃ উন্নত জাতের ফসল বেশি ফলন দেওয়ায় কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পায়।
  • দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তাঃ উন্নত জাতের ফসল চাষের মাধ্যমে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পেলে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা হয়।
  • পরিবেশের উপর চাপ কমানোঃ উন্নত জাতের ফসল কম জায়গায় বেশি ফলন দেওয়ায় পরিবেশের উপর চাপ কমে।
  • খাদ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধিঃ বিভিন্ন ধরণের উন্নত জাতের ফসল চাষের মাধ্যমে খাদ্যের বৈচিত্র্য বৃদ্ধি পায়।
  • কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নঃ উন্নত জাতের ফসল চাষের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা হয়।
উল্লেখ্য যে, উন্নত জাতের ফসলের সকল সুবিধা ভোগ করতে হলে আপনাকে সেগুলোর যথাযথ যত্ন নিতে হবে। এছাড়াও সঠিক সময়ে সেচ দেওয়া, সার প্রয়োগ নিড়ানি দেওয়া এবং যথাযথ সময়ে কীটনাশক ব্যবহার করা। তাহলেই আপনি অবশ্যই জাতগুলো থেকে অধিক পরিমাণ ফসল পেতে পারেন।

লেখকের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবংআমন ধানের জাত সমূহ ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত অনেক তথ্য জেনেছেন। আপনাদের সুবিধার জন্য আজকের এই আর্টিকেলে আমরা একজন কৃষকের জন্য আমন মৌসুমে কোন কোন জাতের ধান চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায় এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

 উপরের এ তথ্যগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে একজন কৃষকের জন্য আমন মৌসুমে কোন কোন জাতের ধান চাষ করা হয়ে থাকে তার সম্পর্কে জানতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি সঠিক তথ্য পেয়ে উপকৃত হয়ে থাকেন,তাহলে আপনার পরিচিত বন্ধুদের সাথে এই বিষয় নিয়ে বেশি বেশি শেয়ার করবেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এরোস বিডি ব্লগ ওয়েবসাইট নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url