বারোমাসি সবজি চাষের তালিকা
প্রিয় পাঠক আপনি কি বারো মাসে সবজি চাষের তালিকা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। টবে বারোমাসি সবজি চাষ সম্পর্কে জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃবারোমাসি সবজি চাষের তালিকা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার জন্য আপনাকে নিজের তথ্যগুলো সম্পন্ন মনোযোগ সহকারে অনুসরণ করতে হবে।
বারোমাসি সবজি চাষের তালিকা
বর্তমান সময়ে হাটেবাজারগুলোতে প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন সবজিগুলো পাওয়া যায়। আর এই সবজিগুলো একটি একের ঋতুতে হয়ে থাকে। কিন্তু অনেক সবজিগুলো রয়েছে যেগুলো বারোমাসি চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তাই আজকের আর্টিকেলটি সমস্ত জুড়ে থাকছে বারোমাসি সবজি চাষের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক তথ্য।
যে তথ্য গুলোর মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন যে, কোন কোন সবজি গুলো কোন সময়ে বা কোন ঋতুতে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায় তার বিস্তারিত সঠিক তথ্য। তাহলে কথা না বাড়িয়ে চলুন আমরা জেনে আসি বারোমাসি সবজি চাষের তালিকা।
গ্রীষ্মকাল (মার্চ-মে)
- লাউ
- কুমড়া
- ঝিঙা
- পটল
- ধুন্দুল
- করলা
- শসা
- বেগুন
- টমেটো
- মরিচ
- লম্বা বেগুন
- ঢেঁড়স
- পুঁইশাক
- লালশাক
বর্ষাকাল (জুন-আগস্ট)
- লাউ
- কুমড়া
- ঝিঙা
- পটল
- ধুন্দুল
- করলা
- শসা
- বেগুন
- টমেটো
- মরিচ
- লম্বা বেগুন
- ঢেঁড়স
- কচু
- মুলা
- শালগম
- পেঁপে
- কলা
- আম
- লিচু
- জাম্বুরা
শীতকাল (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী)
- আলু
- পেঁয়াজ
- রসুন
- গাজর
- বিট
- ফুলকপি
- ব্রকলি
- বাঁধাকপি
- শালগম
- মুলা
- শসা
- টমেটো
- মরিচ
- বেগুন
- পালং শাক
- মেথি শাক
- সরিষা শাক
বারোমাসি সবজি চাষের কিছু টিপস
- উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করুন।
- জমির যথাযথ প্রস্তুতি করুন।
- সঠিক সময়ে সার ও সেচ প্রয়োগ করুন।
- পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করুন।
- নিয়মিত পরিচর্যা করুন।
সবজি চাষের মাটি তৈরি
সবজি চাষের সময় সূচি
বাংলাদেশের প্রায় ছয়টি ঋতুতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে যে সমস্ত কৃষক বন্ধুরা রয়েছে তারা অনেকেই কোন সময় কি সবজি চাষ করবে এই বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট অবগত না থাকার কারণে কোন সময় কোন সবজি চাষ করা যায় এই নিয়ে তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তাই আজকের আর্টিকেলটির মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চাই যে, বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু অনুযায়ী কোন কোন সবজি চাষ করা হয়ে থাকে তার সময় সূচি।
গ্রীষ্মকাল (মধ্য মার্চ - মধ্য জুন)
- লাউ, ঝিঙা, করলা, চিচিংগা, শসা, বরবটি, পটল, ঢেঁড়স, লালশাক, পুঁইশাক, কাঁকরোল, মিষ্টি আলু, ধুন্দল, মুখীকচু, মানকচু, লম্বা কচু, সজিনা, পানিকচু, গীমাকলমি, ঢেঁড়স, কাঁচা মরিচ,
বর্ষাকাল (মধ্য জুন - মধ্য সেপ্টেম্বর)
- লাউ, ঝিঙা, করলা, চিচিংগা, শসা, ঢেঁড়স, লালশাক, পুঁইশাক, কাঁকরোল,
- ধানের সাথে লাউ, ঝিঙা, করলা, চিচিংগা, শসা, ঢেঁড়স,ভেজিটেবল লেবু,
শরৎকাল (মধ্য সেপ্টেম্বর - মধ্য নভেম্বর)
- বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, লালশাক, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক,
- লাউ, ঝিঙা, করলা, চিচিংগা, শসা, বরবটি, পটল,
- মিষ্টি আলু, ধুন্দল,
হেমন্তকাল (মধ্য নভেম্বর - মধ্য জানুয়ারী)
- বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, লালশাক, ডাঁটা, পাতাপেঁয়াজ, পাটশাক,
- গাজর, মুলা, শালগম, বিট,
- আলু,পালং শাক,
বসন্তকাল (মধ্য মার্চ - মধ্য জুন)
- লাউ, ঝিঙা, করলা, চিচিংগা, শসা, বরবটি, পটল, ঢেঁড়স, লালশাক, পুঁইশাক, কাঁকরোল,
- মিষ্টি আলু, ধুন্দল,
উল্লেখ্য
- এই সময় সূচি কেবল একটি নির্দেশিকা।
- স্থানীয় জলবায়ু, মাটির ধরন, এবং জাতের উপর নির্ভর করে সবজি চাষের সময় পরিবর্তিত হতে পারে।
- স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে আপনার এলাকার জন্য সর্বোত্তম সবজি চাষের সময় সম্পর্কে জানুন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- বীজ বপনের আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নিন।
- বীজ বপনের সময় মাটির আর্দ্রতা পরীক্ষা করে নিন।
বারোমাসি সবজি কোনটি
বারোমাসি সবজি বলতে বোঝায় এমন সবজি যা সারা বছর ধরে চাষ করা যায় এবং বাজারে পাওয়া যায়। অনেক কৃষক বন্ধুরা রয়েছে যারা বাংলাদেশের সবজি চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এ বারোমাসি সবজি গুলো কি কি সেগুলো সর্বপ্রথম জানা দরকার। কেননা কোন সময় কোন কোন সবজি চাষ সবচেয়ে ভালো হয় এবং বারোমাসি সবজি কোনগুলো চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায় এই বিষয় নিয়ে তাদের যথেষ্ট অবগত থাকা একান্ত জরুরী।
কিছু জনপ্রিয় বারোমাসি সবজি হল
- লাউ
- কুমড়া
- ঝিঙা
- পটল
- ধুন্দুল
- করলা
- শসা
- বেগুন
- মরিচ
- পুঁইশাক
- লালশাক
এছাড়াও, আরও কিছু সবজি আছে যা বারোমাসি চাষ করা সম্ভব, তবে বাজারে সবসময় নাও পাওয়া যেতে পারে।
বারোমাসি সবজি চাষের কিছু সুবিধা
- সারা বছর ধরে তাজা সবজি পাওয়া যায়।
- বাজারে সবজির দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
- বিভিন্ন ধরণের সবজি খাওয়া সম্ভব হয়।
- পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়।
বারোমাসি সবজি চাষের কিছু অসুবিধা
- কিছু সবজির ক্ষেত্রে ফলন কম হতে পারে।
- পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেশি হতে পারে।
- চাষে বেশি পরিশ্রম ও যত্নের প্রয়োজন হতে পারে।
বারোমাসি সবজি চাষের কিছু টিপস
- উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার করুন।
- জমির যথাযথ প্রস্তুতি করুন।
- সঠিক সময়ে সার ও সেচ প্রয়োগ করুন।
- পোকামাকড় ও রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করুন।
- নিয়মিত পরিচর্যা করুন।
এই টিপসগুলো অনুসরণ করলে আপনি সারা বছর ধরে তাজা ও পুষ্টিকর সবজি খেতে পারবেন।
বারোমাসি ফসলের নাম
শাকসবজি
- পাতা সবজি: লাল শাক, পুঁই শাক, ডাঁটা শাক, পালং শাক,
- ফল সবজি: লাউ, ঝিঙা, করলা, চিচিংগা, শসা, বরবটি, পটল,
- মূল সবজি: মিষ্টি আলু, ধুন্দল,
- ফুল সবজি: ফুলকপি, বাঁধাকপি,
- কাঁচা মরিচ:
ফল
- পেঁপে: সারা বছর ধরে পাওয়া যায়।
- আম: মে থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত।
- জাম: জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত।
- কলা: সারা বছর ধরে পাওয়া যায়।
- পেয়ারা: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।
- লেবু: সারা বছর ধরে পাওয়া যায়।
- কাঁঠাল: জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত।
- আনার: অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত।
- আপেল: নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত।
- খেজুর: ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত।
শস্য
- ধান: আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত।
- গম: কার্তিক থেকে ফাগুন মাস পর্যন্ত।
- ভুট্টা: গ্রীষ্মকালে।
- মটরশুঁটি: শীতকালে।
- তিল: শীতকালে।
- সরিষা: শীতকালে।
- খেসারি: শীতকালে।
উল্লেখ্য
স্থানীয় জলবায়ু, মাটির ধরন, এবং জাতের উপর নির্ভর করে বারোমাসি ফসলের ধরন পরিবর্তিত হতে পারে।স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে আপনার এলাকার জন্য সর্বোত্তম বারোমাসি ফসল সম্পর্কে জানুন।
টবে বারোমাসি সবজি চাষ
বর্তমান সময়ে অনেকে রয়েছে যারা বারোমাসি সবজি চাষ করার জন্য তাদের বাসা বাড়িতে বাড়ির ছাদের উপরে টবের মধ্যে বারোমাসি সবজি চাষ করে থাকে। টবে বারোমাসি সবজি চাষ করা সম্ভব, তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। আর যে সমস্ত বিষয়ের উপর বিশেষ করে খেয়াল রাখা প্রয়োজন, নিজে সে সমস্ত বিষয়বস্তুর বর্ণনা দেওয়া হলো। যাতে করে একজন সহজে তবে বারো মাসে সবজি চাষ করার বিষয়ে সঠিক তথ্য পেতে পারে।
মাটি
- টবে ব্যবহারের জন্য মাটি হতে হবে ঝুরঝুরে, হালকা এবং পানি ধরে রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন।
- দুই ভাগ বেলে দো-আঁশ মাটির সঙ্গে দুই ভাগ জৈব সার মিশিয়ে বীজতলার মাটি তৈরি করতে হয়।
- মাটি যদি এঁটেল হয় তাহলে একভাগ বালি মিশিয়ে হালকা করে নিতে হবে।
উপযুক্ত টব
- টবের আকার: সবজির ধরন অনুযায়ী টবের আকার নির্বাচন করুন।
- টবের গভীরতা: গভীরতা কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি হতে হবে।
- টবের নিকাশি ব্যবস্থা: টবের তলায় অবশ্যই জল নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে।
বীজ বপন
- বীজ বপনের আগে মাটি হালকা ঝুরঝুরে করে টবের উপরের ভাগ সমতল করুন।
- খুব হালকাভাবে বীজ ছড়িয়ে দিন টবের ভেতর।
- জৈব সার দিয়ে বীজগুলোকে ঢেকে দিন।
- নিয়মিত ছোট ছোট ছিদ্রযুক্ত ঝাজরি দিয়ে পানি দিন।
- বীজের উপর জৈব সারের আবরণ সরে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
পরিচর্যা
- নিয়মিত পানি দিন, তবে মাটিতে যেন পানি জমে না থাকে।
- গাছের গোড়ায় আগাছা পরিষ্কার করুন।
- জৈব সার ব্যবহার করুন।
- রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভালো।
- পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে গাছকে রক্ষা করুন।
বারোমাসি সবজির কিছু উদাহরণ
- পুঁই শাক
- লাউ
- ঝিঙে
- বেগুন
- টমেটো
- মরিচ
- শসা
- ঢেঁড়স
- কলমি শাক
- লেটুস
টবে বারোমাসি সবজি চাষ একটি সহজ ও আনন্দের কাজ। এটি আপনাকে টাটকা ও নিরাপদ সবজি সরবরাহ করবে।
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ বারোমাসি সবজি চাষের তালিকা
প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং বারোমাসি সবজি চাষের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত সঠিক তথ্য গুলো জেনেছেন। আপনাদের সুবিধার জন্য বারোমাসি কোন কোন সবজি গুলো চাষ করলে অধিক লাভবান হওয়া যায় সেই সমস্ত বিষয়বস্তু উপর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি যদি বারোমাসি সবজি চাষের তালিকার সম্পর্কে সঠিক তথ্য পেয়ে উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে, আপনার পরিচিত কৃষক বন্ধুদের সাথে এই বিষয় নিয়ে বেশি বেশি শেয়ার করবেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কৃষি বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন ধন্যবাদ।
এরোস বিডি ব্লগ ওয়েবসাইট নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url