শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস
তারাবির নামাজ না পড়লে কি রোজা হবেআপনি কি শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আজকের আমাদের এই
পোস্টটি আপনার জন্য। শাওয়ালের শুক্রবার রোজা রাখা যাবে কি এ বিষয়ে সঠিক তথ্য
জানতে হলে, আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃশাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস এর সঠিক তথ্য সম্পর্কে জানতে হলে, নিজের
তথ্যগুলো মনোযোগ সহকারে অনুসরণ করুন।
শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস
শাওয়াল মাসে রোজার সম্পর্কে হাদিস আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফে উল্লেখ রয়েছে।
আমরা যদি আমাদের পবিত্র কোরআন শরীফ নিয়মিত পাঠ করি তাহলে অবশ্যই আমরা শাওয়াল
মাসের রোজার সম্পর্কে হাদিস গুলো বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবো। একজন মুসলিম
ঈমানদার হয়েও যদি আমরা শাওয়াল মাসের রোজার সম্পর্কে হাদিস না জানি
তাহলে, শাওয়াল মাসের রোজা কি এবং এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য কতটুক সে সমস্ত
বিষয়বস্তু আমরা জানতে পারবো না। অর্থাৎ আমাদের রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শাওয়াল মাসের
রোজার فضائل সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন। নিচে আমরা শাওয়াল মাসের রোজা
সম্পর্কে হাদিস এর গুরুত্বগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই তথ্যগুলোর মাধ্যমে আমরা
জানতে পারবো শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস এর বিভিন্ন তথ্য। তাহলে চলুন
বিস্তারিত অংশ নিয়ে আলোচনা করি।
কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব
- হজরত আবু বকর (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, "যে ব্যক্তি রমজান মাসের সব রোজা রাখল এবং তারপর শাওয়াল মাসের আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।" (মুসলিম: ১১৬৪; আবু দাউদ: ২৪৩৩; সহিহ-আলবানি)
আসমান ও জমিনের সৃষ্টির সমতুল্য নেকি
- হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, "আল্লাহ্ তা'আলা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ্ তা'আলা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান নেকি দেবেন; সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।" (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬৮৯; সহিহ-আলবানি)
জান্নাতের দরজা খোলা থাকে
- হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, "যখন শাওয়াল মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং শেষ রাত পর্যন্ত খোলা থাকে।" (সুনানে তিরমিযী: ৬৮২; সহিহ-আলবানি)
শাওয়াল মাসের রোজার হাদিস গুলোর গুরুত্ব
- শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল।
- এটি পূর্ববর্তী রমজানের সাথে পরবর্তী রমজানকে সংযুক্ত করে।
- এটি পূর্ণ এক বছর রোজার সমতুল্য সওয়াবের কারণ।
শাওয়াল মাসের রোজা রাখার কিছু নিয়ম
- রমজানের রোজা শেষ করার পর যেকোনো সময় শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখা যাবে।
- একটানা ছয় দিন রাখা সুন্নত হলেও, আলাদা আলাদা রেখেও রাখা যাবে।
- রমজানের কাজা রোজা আদায় করার পর শাওয়ালের ছয় রোজা রাখা উত্তম।
- ইদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা হারাম।
- শাওয়ালের ছয়টি রোজা ধারাবাহিকভাবে রাখা উত্তম। তবে, বিরতি দিয়েও রাখা যাবে।
- রোজার নিয়ত করার সময় মনে রাখতে হবে যে, এটি শাওয়ালের ছয়টি রোজার মধ্যে একটি।
শাওয়ালের রোজা রাখা হয় কেন
শাওয়াল মাসের রোজার হাদিস সম্পর্কে অনেক মুসলিম ঈমানদারগণ শাওয়াল মাসের রোজা
পরিপূর্ণতা সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগত না। তারা অনেকে জানে না যে শাওয়াল মাসের রোজা
আসলে কি এবং কিসের জন্য এই শাওয়াল মাসের রোজা রাখা হয়। তাই আজকের এই আর্টিকেলের
মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চাই যে, শাওয়াল মাসের রোজা আসলে কি এবং কিসের জন্য এই
শাওয়াল মাসে রোজা রাখা হয়। তাহলে চলুন কথা না বাড়িয়ে জেনে নেওয়া যাক শাওয়াল
মাসে রোজা রাখা হয় কেন।
রমজানের রোজার পরিপূর্ণতা
- রমজান মাসের রোজা শেষ করার পরেও শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখার মাধ্যমে রমজানের রোজার অপূর্ণতা পূরণ করা সম্ভব। যারা রমজান মাসে কোনো কারণে রোজা রাখতে পারেননি, তারা শাওয়ালের রোজা রেখে কাযা আদায় করতে পারেন।
সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব
- হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি রমজান মাসের সব রোজা রাখল এবং তারপর শাওয়াল মাসের আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।" (মুসলিম: ১১৬৪; আবু দাউদ: ২৪৩৩; সহিহ-আলবানি)
জান্নাতের দরজা খোলা থাকে
- হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "যখন শাওয়াল মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং শেষ রাত পর্যন্ত খোলা থাকে।" (সুনানে তিরমিযী: ৬৮২; সহিহ-আলবানি)
আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ
- রমজান মাসের অফুরন্ত রহমত ও বরকতের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য শাওয়ালের রোজা রাখা হয়।
গুনাহ মাফের জন্য
- শাওয়ালের রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করা হয়।
নেকি অর্জন
- শাওয়ালের রোজা রাখার মাধ্যমে প্রচুর নেকি অর্জন করা সম্ভব।
নিয়মিত ইবাদতের অভ্যাস
- রমজান মাস শেষেও নিয়মিত ইবাদতের অভ্যাস অব্যাহত রাখার জন্য শাওয়ালের রোজা রাখা হয়।
শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি
- রোজা রাখার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি অর্জন করা সম্ভব।
সামাজিক বন্ধন
- শাওয়ালের রোজা রাখার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর প্রতি অনুসরণ
- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শাওয়ালের রোজা রাখতেন, তাই তার অনুসরণ করার জন্য মুসলমানরাও এ রোজা রাখেন।
- উল্লেখ্য যে, শাওয়াল মাসের রোজা রাখা ফরজ নয়, বরং এটি একটি সুন্নত।
শাওয়াল মাসের অর্থ কি
বর্তমানে আমরা যারা মুসলিম সম্প্রদায় রয়েছি আমাদের ভিতরে অনেকে শাওয়াল মাসের
অর্থ এই বিষয়ে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেনা। শাওয়াল মাসে অর্থ কি এই বিষয়
সম্পর্কে না জানার কারণে অনেকে শাওয়াল মাসের গুরুত্ব সম্পর্কে তেমন কিছু বুঝে
না।। যার জন্য শাওয়াল মাসের অর্থ এর প্রতিপাদ্য বিষয়টি কোন ভাষা থেকে এসেছে এবং
এর গুরুত্ব কতটুকু তার সম্পর্কে নিচে আমরা আলোচনা করব। অর্থাৎ শাওয়াল শব্দটি
আরবি ভাষা থেকে এসেছে। এর অর্থ বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন
- উঁচু করা, উন্নতকরণঃ শাওয়াল মাসের আমলের মাধ্যমে ঈমানের উন্নতি লাভ করা যায়।
- পূর্ণতাঃ শাওয়াল মাসের রোজার মাধ্যমে রমজান মাসের রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূর্ণতা লাভ করে।
- ফলবতীঃ শাওয়াল মাসের আমলের মাধ্যমে নেকির পাল্লা ভারী হয়।
- গৌরব করাঃ শাওয়াল মাসের আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
- বিজয়ী হওয়াঃ শাওয়াল মাসের আমলের মাধ্যমে শয়তানের প্ররোচনা থেকে বিজয়ী হওয়া যায়।
- প্রার্থনায় হস্ত উত্তোলন করাঃ শাওয়াল মাসের আমলের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য হাত উত্তোলন করা হয়।
শাওয়াল মাসের গুরুত্ব
- হজের মাসঃ শাওয়াল মাস হজের তিন মাসের প্রথম মাস।
- ঈদের মাসঃ শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে ঈদুল ফিতর পালিত হয়।
- রমজানের রোজার পরিপূরকঃ শাওয়ালের রোজার মাধ্যমে রমজান মাসের রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূর্ণতা লাভ করে।
- নফল ইবাদতের মাসঃ শাওয়াল মাসে নফল ইবাদতের জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
শাওয়াল মাস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাসের আমলের মাধ্যমে ধর্মীয় ও
ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সুফল লাভ করা যায়।
শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত কি
শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত অপরিসীম। হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি
রমজানের রোজার সাথে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখবে, সে যেন পুরো বছর রোজা রাখল তৌফিক
আদায় করল। অর্থাৎ রমজান মাসে আমাদের রোজার গুণমান যেকোনো ধরনের ত্রুটি দূর করার
উপায় হিসেবে শাওয়ালের ছয়টি দিন সুপারিশ করা হয়
এবং আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) কবুল করলে এক বছরের রোজার সমতুল্য হিসেবে
গণ্য করা হয়। তাই আসুন আমরা জেনে নিই রমজান মাসে আমাদের রোজা রাখার সাথে শাওয়াল
মাসের ছয় রোজার ফজিলত কি কি সমস্ত বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে হলে নিচের তথ্যগুলো
মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার ফলে
- পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
- রমজানের রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতি পূর্ণতা লাভ করে।
- গুনাহ মাফের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
- আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়।
- জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার নিয়
- শাওয়াল মাসের যেকোনো ছয় দিন রোজা রাখা যাবে।
- ঈদের দিন রোজা রাখা যাবে না।
- রমজানের কাযা রোজা থাকলে, প্রথমে কাযা রোজা আদায় করবে।
- শাওয়ালের রোজা রাখা সুন্নত।
শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- রমজান মাসের শেষের দিকে রোজার নিয়ত করে রাখা।
- ঈদের দিনের পর থেকে ছয় দিন রোজা রাখা।
- রোজার নিয়ম-কানুন মেনে চলা।
- রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে অন্যদের জানানো
- শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার ফলে অনেক ধর্মীয় সুফল লাভ করা যায়। তাই সকল মুসলিমের উচিত শাওয়ালের ছয় রোজা রাখার চেষ্টা করা।
শাওয়ালের শুক্রবার রোজা রাখা যাবে কি
শাওয়ালের শুক্রবার অবশ্যই রোজা রাখা যাবে। তবে শাওয়ালের শুক্রবার রোজা রাখা
সুন্নত। কেননা এই দিনটি হল ইসলাম ধর্মের পবিত্র ও জুম্মার নামাজ পড়ার দিন। তাহলে
আসুন আমরা জেনে নিই শাওয়াল মাসের শুক্রবার রোজা রাখা যাবে কিনা তার বিশেষ
সম্পর্কে সঠিক তাৎপর্য নিচে তুলে ধরা হলো।
হাদিসে রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণিত
- হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ "তোমরা শুক্রবার রোজা রাখো না, যদি না তা পূর্ববর্তী বা পরবর্তী রোজার সাথে সংযুক্ত হয়।" (সহিহ মুসলিম)
- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেন, "তোমরা শুক্রবার রোজা রাখবে না, যদি না তা তোমার নিয়মিত রোজার অংশ হয়।" (সহিহ বুখারী)
শাওয়ালের শুক্রবার রোজা রাখার গুরুত্ব
- শুক্রবার রোজা রাখা যদি পূর্ববর্তী বা পরবর্তী রোজার সাথে সংযুক্ত হয়, তাহলে তা রাখা উত্তম।
- শুক্রবার রোজা রাখা যদি কারো নিয়মিত রোজার অংশ হয় (যেমন, প্রতি সপ্তাহে দুই দিন রোজা রাখা), তাহলে তাও উত্তম।
- শুক্রবার রোজা রাখা যদি কারো পক্ষে কষ্টকর হয়, তাহলে তা না রাখাই ভালো।
শাওয়ালের শুক্রবার রোজা রাখার ফজিলত
- শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত।
- শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখলে পূর্ণ এক বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
- শুক্রবার রোজা রাখা সুন্নত।
- সুতরাং, শাওয়ালের শুক্রবার রোজা রাখলে একই সাথে দুটি সুন্নত পালন করা হয়।
শাওয়ালের শুক্রবার রোজা রাখা যাবে। তবে, রোজা রাখার আগে নিজের শারীরিক অবস্থা ও
ক্ষমতা বিবেচনা করা উচিত।
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস
প্রিয় পাঠক আজকের আর্টিকেলটি আপনারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন এবং শাওয়াল
মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস এর বিস্তারিত অনেক তথ্য জেনেছেন। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে
আপনি যদি শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস গুলোর সঠিক তথ্য জেনে উপকৃত হয়ে
থাকেন, তাহলে আপনার পরিচিতজনদের সাথে বেশি বেশি শেয়ার করবেন এবং ভবিষ্যতে এই
ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
এরোস বিডি ব্লগ ওয়েবসাইট নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url