মাসিকের কতদিন পর নামাজ পড়া যায়
আপনি কি মাসিকের কতদিন পর নামাজ পড়া যায় এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন? তাহলে আমাদের আজকের পোস্টটি আপনার জন্য।পিরিয়ডের কত দিন পর কোরআন পড়া যায় জানতে হলে, আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃমাসিকের কত দিন পর নামাজ পড়া যায় এই বিষয় সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে হলে, নিচের তথ্য গুলো সম্পন্ন অনুসরণ করুন।
মাসিকের কতদিন পর নামাজ পড়া যায়
মাসিকের কত দিন পর নামাজ পড়া যায় এ বিষয় সম্পর্কে অনেক নারীরা সঠিক তথ্য জানেনা। যার কারনে তারা মাসিক হওয়া অবস্থায় কত দিন পর নামাজ-কালাম পড়া যাবে এই বিষয়ে তারা সঠিকভাবে অবগত না। বর্তমান সময়ে অনেক নারীরা রয়েছে যারা মাসিক অবস্থায় নামাজ কালাম পড়ে থাকে। কিন্তু এই মাসিক অবস্থায় নামাজ রোজা পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কেননা নামাজ রোজা হল আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনের একটি মাধ্যম। আর আল্লাহর সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপনের জন্য নিজেকে সর্ব প্রথমে সূচি শুদ্ধ হতে হবে।মাসিকের কতদিন পর নামাজ পড়া যাবে তা নির্ভর করে মাসিক কতদিন স্থায়ী হয় তার উপর ভিত্তি করে। সাধারণত, মাসিক ৬-৭ দিন স্থায়ী হয়। তবে, ৫-৮ দিনের মধ্যেও মাসিক হতে পারে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মাসিকের কত দিন পর নামাজ পড়া যায় এ বিশেষ সম্পর্কে নিম্নলিখিত অংশে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
যদি মাসিক ৬-৭ দিন স্থায়ী হয়
- ৮ম দিনঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
- ৭ম দিনঃ যদি ৭ম দিন সকালে রক্তপাত বন্ধ হয়, তাহলে গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
- ৬ষ্ঠ দিনঃ যদি ৬ষ্ঠ দিন সকালে রক্তপাত বন্ধ হয়, তাহলে গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
যদি মাসিক ৫ দিনের কম স্থায়ী হয়
- ৬ষ্ঠ দিনঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
- ৫ম দিনঃ যদি ৫ম দিন সকালে রক্তপাত বন্ধ হয়, তাহলে গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
যদি মাসিক ৮ দিনের বেশি স্থায়ী হয়
- ৯ম দিনঃ সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
- ৮ম দিনঃ যদি ৮ম দিন সকালে রক্তপাত বন্ধ হয়, তাহলে গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
মাসিক শেষ হওয়ার পর নামাজ পড়া সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- মাসিকের সময় রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।
- গোসল করার আগে পুরো শরীর থেকে রক্তপাত পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
- গোসলের সময় ওضو করার নিয়ম মেনে চলতে হবে।
- গোসলের পর পবিত্র পোশাক পরিধান করে নামাজ আদায় করতে হবে।
অনিয়মিত মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কি
বর্তমান সময়ে অনেক নারী রয়েছে যাদের মাসিকের ঋতু চক্র অনিয়মিত হওয়ার কারণে তারা অনেক সময় বেশ চিন্তায় পড়ে।, কেননা তারা অনেক সময় মনে করে যে অনিয়মিত মাসিক অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে কিনা। কিন্তু অনিয়মিত মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কিনা তা অনেক সময় নির্ভর করে অনিয়মিত মাসিক ধরণের উপর ভিত্তি করে।
তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক অনিয়মিত মাসিক অবস্থায় নামাজ পড়া যাবে কিনা এই সমস্ত বিষয়ে সম্ভাব্য কিছু পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত নিচে আলোচনা করা হলো। যে তথ্য গুলোর মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন যে, অনিয়মিত মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কিনা।
কিছু সম্ভাব্য পরিস্থিতি
মাসিকের সময়কাল অনিয়মিত
- যদি মাসিকের সময়কাল ৫-৮ দিনের মধ্যে থাকে, তাহলে প্রতিবার রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
- যদি মাসিকের সময়কাল ৮ দিনের বেশি হয়, তাহলে ৮ দিন পর গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
- যদি মাসিকের সময়কাল ৫ দিনের কম হয়, তাহলে ৫ দিন পর গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
মাসিকের অন্তর অনিয়মিত
- যদি দুই মাসিকের মধ্যে অন্তর কমপক্ষে ১৫ দিন হয়, তাহলে ১৫ দিন পর গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
- যদি দুই মাসিকের মধ্যে অন্তর ১৫ দিনের কম হয়, তাহলে পূর্ববর্তী মাসিকের রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর গোসল করে নামাজ পড়া যাবে।
মাসিক সম্পূর্ণ বন্ধ
- যদি মাসিক সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিদিন ওজু করে নামাজ পড়তে হবে।
- ৫০ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পর গোসলের প্রয়োজন হবে না, শুধুমাত্র ওজু করে নামাজ পড়া যাবে।
পিরিয়ডের কত দিন পর কোরআন পড়া যায়
পিরিয়ডের কত দিন পর কোরআন পড়া যাবে তা নির্ভর করে অনেক সময় প্রত্যেক ধর্মীয় মানুষের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। কেননা একেক ধর্মে একেক রকম বিধি-বিধান সমূহ রয়েছে। আর এই সমস্ত বিধি-বিধান গুলো প্রত্যেক ধর্মের মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলাম ধর্মে এক এক রকম বিধি-বিধানসমূহ রয়েছে।
হিন্দু ধর্মেও আলাদা বিধি-বিধান সমূহ রয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মেও রয়েছে আলাদা বিধি বিধান। তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক। পিরিয়ডের কতদিন পর কোরআন পড়া যায় এই সমস্ত বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে হলে নিজের তথ্যগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন
ইসলাম ধর্মে
- ইসলাম ধর্ম অনুসারে, পিরিয়ডের সময় কোরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ।
- তবে, পিরিয়ডের সময় কোরআন তেলাওয়াত করা যাবে, যদি তা মুখস্থ থেকে করা হয়।
- পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর গোসল করে পবিত্র হওয়ার পর কোরআন স্পর্শ করা যাবে।
হিন্দুধর্মে
- হিন্দু ধর্ম অনুসারে, পিরিয়ডের সময় কোরআন পড়া বা স্পর্শ করা নিষিদ্ধ।
- পিরিয়ডের সময় নারীদেরকে "অশুচি" বলে মনে করা হয় এবং তাদেরকে ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
- পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর স্নান করে পবিত্র হওয়ার পর কোরআন পড়া বা স্পর্শ করা যাবে।
খ্রিস্টধর্মে
- খ্রিস্টধর্মে পিরিয়ডের সময় কোরআন পড়া বা স্পর্শ করা নিয়ে কোন নির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই।
- তবে, কিছু খ্রিস্টানরা পিরিয়ডের সময় ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে বিরত থাকতে পছন্দ করেন।
অন্যান্য ধর্মে
- অন্যান্য ধর্মে পিরিয়ডের সময় কোরআন পড়া বা স্পর্শ করা নিয়ে বিভিন্ন রীতিনীতি ও বিশ্বাস রয়েছে।
মাসিক শেষে পবিত্র হওয়ার উপায়
মাসিক শেষে পবিত্র হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে
রক্তপাত বন্ধ হওয়া
- মাসিক শেষে পবিত্র হওয়ার জন্য প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো রক্তপাত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হওয়া।
- রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে রক্তপাত আবার শুরু হবে না।
পানি দিয়ে পরিষ্কার করা
- রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর পানি দিয়ে যোনিপথ এবং আশেপাশের এলাকা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- পানি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত বারবার ধুয়ে ফেলতে হবে।
গোসল করা
- পানি দিয়ে পরিষ্কার করার পর পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।
- গোসল করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখতে হবে:
- পুরো শরীরে পানি পৌঁছানো।
- ওضو করার নিয়ম মেনে চলা।
- মুখ, নাক, হাত-পা, মাথা এবং কান ভালোভাবে ধোয়া।
- জামাকাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করে পরা।
দোয়া পড়া
- গোসল শেষে পবিত্র হওয়ার দোয়া পড়া مستحب।
মনে রাখার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- মাসিকের সময় রক্তপাত বন্ধ হওয়ার পর গোসল না করা পর্যন্ত নামাজ, রোজা, কোরআন স্পর্শ করা, তাওয়াফ করা ইত্যাদি করা যাবে না।
- মাসিকের সময় যদি কোন কারণে গোসল করা সম্ভব না হয়, তাহলে তায়াম্মুম করা যাবে।
- মাসিকের সময় স্বামী-স্ত্রীর মিলন করা নিষিদ্ধ।
১০ দিনের বেশি মাসিক হলে নামাজ পড়া যাবে কি
ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুযায়ী একজন নারীর ঋতুস্রাবের সর্বনিম্ন সময় তিনদিন আর সর্বোচ্চ সময় ১০ দিন। তিন দিন থেকে ১০ দিন পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে মাসিক ঋতুস্রাবকালীন নামাজ-রোজা করার প্রয়োজন নেই। এই দিনগুলোতে নারীর যথাসাধ্য বিশ্রাম দরকার। হ্যাঁ, ১০ দিনের বেশি মাসিক হলেও নামাজ পড়া যাবে। তবে, কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি:
নিশ্চিত হতে হবে
- এটি স্বাভাবিক মাসিক রক্তপাত, নাকি অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা।
- রক্তপাত স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়েছে কিনা।
রক্তপাত বন্ধ হলে
- গোসল করে পবিত্র হতে হবে।
- এরপর নামাজ আদায় করা যাবে।
রক্তপাত বন্ধ না হলে
- প্রথমত, একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
- দ্বিতীয়ত, প্রতিটি নামাজের আগে অজু করতে হবে।
- তৃতীয়ত, সালাতের সময় ওজুহের পরিবর্তে তায়াম্মুম করতে হবে।
মনে রাখবেন মাসিকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- মাসিকের সময় নারীদের মসজিদে প্রবেশ করা নিষেধ।
- মাসিকের সময় নারীদের কোরআন স্পর্শ করা নিষেধ।
- মাসিকের সময় নারীদের রোজা রাখা নিষেধ।
লেখকের শেষ মন্তব্যঃ মাসিকের কতদিন পর নামাজ পড়া যায়
প্রিয় পাঠক আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছেন। এবং মাসিকের কত দিন পর নামাজ পড়া যায় এ বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অনেক কিছু জেনেছেন। আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা যদি সঠিক তথ্য জেনে থাকেন, তাহলে আপনাদের পরিচিতদের সাথে বেশি বেশি এই বিষয়ে সম্পর্কে শেয়ার করবেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন ধন্যবাদ।
এরোস বিডি ব্লগ ওয়েবসাইট নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url